30 Apr 2024, 07:06 pm

ইসরাইলে ইরানি হামলার ঐতিহাসিক ১২টি বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি দেশটির সামরিক শক্তির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ।

এই বাহিনী আজ ১৪ এপ্রিল ভোররাতের দিকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত লক্ষ্যবস্তু টার্গেট করে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের আঘাত হেনেছে। এই ঐতিহাসিক, গৌরবময় ও সফল অভিযানের বিষয়ে অনেক কিছু বলার রয়েছে। আর এইসব বক্তব্যকে কয়েকটি পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্ট বিশ্লেষক ও গবেষক ইয়াদুল্লাহ জাওয়ানি:
১. ইরানি সততা
এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘সত্য ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতির অভিযান’ যাতে শত্রু ও মিত্র-সবাই বোঝেন যে ইরান যা বলে তা বাস্তবায়ন করে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির বক্তব্য ‘আঘাত পাওয়ার দিন শেষ’ ‘একটা আঘাত করলে দশটা প্রত্যাঘাত পাবে’ –খুবই সঠিক, যৌক্তিক এবং দৃঢ় পৃষ্ঠপোষকতা-ভিত্তিক।
২. প্রতিরক্ষার নীতি বৈধ
জাতিসংঘের ইশতেহার বা ঘোষণার আলোকে ইসলামী ইরানের এই পদক্ষেপ পুরোপুরি সঠিক এবং প্রতিরক্ষা নীতি-ভিত্তিক। ‘সত্য ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতির অভিযান’ ইহুদিবাদী ইসরাইলের নানা অপরাধ ও আগ্রাসনের, বিশেষ করে দামেস্কে ইরানি দূতাবাসের কনস্যুল ভবনের ওপর হামলার জবাব। ওই হামলায় সিরিয়ায় ইরানের বেশ কয়েকজন সামরিক উপদেষ্টা শহীদ হন।
৩. জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ইরানের কঠোরতা
এই অভিযানটি পরিচালনা বর্তমান সময়ে অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল যাতে জাতীয় নিরাপত্তার সুরক্ষা হয় এবং শত্রু পক্ষের হুমকিগুলোর মোকাবেলায় ইরানের প্রতিরোধ শক্তি তথা শত্রুকে ঠেকিয়ে রাখার ক্ষমতা বাড়ে।
৪. ইরানের ক্ষমতা ও শক্তি-সামর্থ্যের এক ক্ষুদ্র প্রদর্শনী
‘সত্য ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতির অভিযান’ ইরানের প্রতিরক্ষা ও সামরিক শক্তির এক ক্ষুদ্র অংশ প্রকাশ করেছে মাত্র। তাই শত্রুদের আগের চেয়েও বেশি এ বাস্তবতা মাথায় রাখতে হবে যে শক্তিশালী ও মহান ইরানি জাতির মোকাবেলায় ভুল হিসাব করা যাবে না।
৫. আয়রন ডোমের সামর্থ্যের মিথ্যা প্রচার
‘সত্য ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতির অভিযান’-এর সময় আয়রন ডোমের অক্ষমতা আগের চেয়েও বেশি প্রকাশ হয়ে পড়েছে। এই অভিযানে অর্ধেকেরও বেশি ইরানের নির্মিত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর অর্ধেকেরও বেশি আয়রন ডোমের বাধা এড়িয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলোতে নিখুঁতভাবে আঘাত হেনে সেসবকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ এইসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র বহু দূর থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
৬. ইসরাইলি আগ্রাসন অব্যাহত রাখার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি
ইরান আগেই সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়ে এই অভিযানের কথা জানিয়ে দিয়েছিল। ইসরাইল যদি আবারও যে কোনো ধরনের আগ্রাসী হামলার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখায় তাহলে তা আগ্রাসন হিসেবে ধরে নেয়া হবে বলে ইরান উল্লেখ করেছে এবং আগের চেয়েও অনেক কঠোর ও ব্যাপকতর জবাব দেয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে।
৭. মার্কিন সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বার্তা ও হুমকি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে এবং ইরানের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের পদক্ষেপে ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি সহযোগিতা থেকে দূরে থাকতে হবে। মার্কিনীরা খুব ভালোভাবেই জানে যে ইসলামী ইরানের এবং প্রতিরোধ অক্ষের মোকাবেলায় কোনো ধরনের ভুল হিসাব করলে ও ইসরাইলের সহযোগী হলে এ অঞ্চলে এবং এ অঞ্চলের বাইরেও তাদের সব সেনা ও ঘাঁটিগুলো মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবে।
৮. আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার গুরুত্ব
ইসলামী ইরান শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অভিন্ন স্বার্থ রক্ষার ভিত্তিতে আঞ্চলিক ও বিশেষ করে প্রতিবেশী সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে বিশ্বাসী বলে ঘোষণা করে আসছে। তাই ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আগ্রাসনে শত্রুর সঙ্গে তাদের ভূমি ও আকাশে কোনো ধরনের সহযোগিতা ও ভুল হিসাব তাদেরকে ইরানের বৈধ আঘাতের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে।
৯. ইরান ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের কঠোর  জবাব দেয়ায় সারা দেশে জনগণ যেভাবে আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করেছে তাতে বোঝা যায় এ অভিযান ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় দাবি ও ইরানের জাতীয় সুদৃঢ় ইচ্ছার প্রকাশ।
১০. ইরানিদের এই পদক্ষেপের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বৈধতা
এ অঞ্চলের ও এর বাইরের অঞ্চলেও অন্যান্য জাতির জনগণ ইরানের এই অভিযানের কারণে আনন্দ প্রকাশ করায় ও এর প্রতি সমর্থন জানানোয় এ অভিযান আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বৈধতা পেয়েছে।
১১. ইরানের সঠিক প্রতিরক্ষা নীতি বিশ্বের জন্য আদর্শ
স্রেফ প্রতিরক্ষামূলক ও অপরাধযজ্ঞের শাস্তির এই অভিযান প্রমাণ করেছে যে গত কয়েক দশকে ইরানের নীতিমালা ও ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার দূরদর্শিতা ও নেতৃত্ব যা প্রতিরক্ষার ভিত্তিগুলোকে শক্তিশালী করা ও দেশের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তিকে জোরালো করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে এসেছে তার সবই ছিল বিজ্ঞচিত ও বাস্তবদর্শী। এ বিষয়টি বিশ্বের অন্যান্য জাতির জন্য মডেল হতে পারে।
১২. ইরানের পবিত্র কুরআন-ভিত্তিক সঠিক বিশ্ব-দৃষ্টি
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইরানি জাতি ও এর সশস্ত্র বাহিনী বাতিল বা মিথ্যার শক্তিগুলোর ওপর সত্যের পক্ষগুলোর বিজয়ের নীতিতে দৃঢ়-বিশ্বাসী। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ইহুদিবাদী ইসরাইল যে কোনো কৌশল বা পদক্ষেপই নিক না কেন নিজের অবৈধ, জুলুমবাজ ও অপরাধপ্রবণ অস্তিত্বের ধ্বংসের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 3200
  • Total Visits: 680582
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1123

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
  • ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৭:০৬

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018